শনিবার , ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , রাত ১১:১৩


আমার আর বেঁচে থাকার কোন মানে নেই'- ছাত্রলীগ নেত্রী

রিপোর্টার :
প্রকাশ : সোমবার , ৬ মার্চ ২০২৩ , রাত ০১:০৯
প্রিন্ট ভিউ

রাবি প্রতিনিধি:


'সারাদেশে আমার ছবি ব্যবহার করে, অর্ধ-সত্য তথ্য পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে, আমাকে রেপিস্ট সাজিয়ে যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে তাতে আমি মানসিকভাবে পুরো ভেঙ্গে পড়েছি এবং আমার মনে হচ্ছে আমার আর বেঁচে থাকার কোন মানে নেই।' বলে অভিযোগ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রলীগ নেত্রী। 


অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর নাম আতিফা হক শেফা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও মন্নুজান হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত আবেদনে তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, শারীরিক ভাবে হেনস্তা ও হত্যার হুমকির অভিযোগ তদন্তের জন্য এসব কথা বলেন তিনি।


আবেদনপত্রে ওই ছাত্রলীগ নেত্রী বলেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি কুরুচিপূর্ণ ফেসবুক পোস্টের জন্য একই বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী লাবণ্য খান প্রজ্ঞার সাথে ফোন কলের মাধ্যমে আমি প্রায় একঘন্টা কথা বলে তার ভুল বোঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু সে আমার কথা গ্রাহ্য করেনি। পরের দিন আনুমানিক সকাল ১০ টায় শেখ রাসেল মাঠেরর পুকুর পাড়ে তাকে এই বিষয়টা সম্পর্কে জানার উদ্দেশ্যে ডাকা হয়। সেখানে সিনিয়র আপু হিসাবে আমি তাকে বোঝাতে থাকি এবং বলি এসব কাজ করা তার ঠিক হয় নি। তাকে বোঝানোর এক পর্যায়ে একই বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ফাতিন নওয়াল নেহাল আমাদের সামনেই সিনিয়রদেরকে অকথ্য ভাষায় গালি দেয়। 


তিনি আরও বলেন, নেহালকে বুঝাতে গেলে, সে ঔদ্ধত্য হয়ে আমার গায়ে অশালীনভাবে হাত দেয়। বারবার তাকে দূরে সরিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও সে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাড টাচ করে। আমার অজান্তে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে করা রেকর্ড এডিট করে সাংবাদিকদের কাছে পৌঁছে দেয় নেহাল এবং অভিযোগকারী শিক্ষার্থী।


আবেদনপত্রের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, এমন একটি আবেদনপত্র পেয়েছি। এখনো এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আলোচনা করে ঘটনাটি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

প্রসঙ্গত এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ নেত্রী আতিফা হক শেফার বিরুদ্ধে বন্ধুদের দিয়ে ধর্ষণের হুমকির অভিযোগ করেন ইনস্টিটিউটের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রী। ইনস্টিটিউটের অভিযোগ তদন্ত কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আক্তার বানুর কাছে লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, গত ২২ ফেব্রুয়ারি লাবণ্য তার ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এক সিনিয়র ভাইয়ের সঙ্গে ক্যাম্পাসের বাইরে একটি রেস্তোরাঁয় খেতে যান। সেখানে ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান, ইতি মণ্ডল, শাহবাজ তন্ময়, আতিফা হক শেফা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সেখানে নানাবিধ অশালীন কথাবার্তা ও অপ্রত্যাশিত অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে থাকেন। পরে তাঁরা আরও নানাভাবে মানসিকভাবে হেনস্তা করতে থাকেন।

 

পরদিন তাকে ফোন দিয়ে দেখা করার জন্য আতিকুর ও আতিফা চাপ দিতে থাকেন। বাধ্য হয়ে তিনি তাঁর কয়েকজন সহপাঠীকে নিয়ে ইনস্টিটিউটের সামনের চায়ের দোকানে যান। সেখানে তাঁর চরিত্র নিয়ে নানা রকম গালিগালাজ ও ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়। সঙ্গে থাকা অন্য সহপাঠীদেরও হেনস্তা করা হয়। এ সময় তাঁকে ‘চরিত্রহীন’ বলেও মন্তব্য করেন আতিফা হক শেফা। এ ছাড়া তাঁকে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

 

এ বিষয়ে অভিযোগ তদন্ত কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আক্তার বানু বলেন, তদন্তের কাজ চলামান রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তদন্ত সম্পন্ন করতে। তবে সবার সাথে এখনো কথা বলা সম্ভব হয়নি। তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ ও সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।


 

এ বিষয়ে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ইনস্টিটিউটের তদন্ত কমিটি আছে। সেখানে ইনস্টিটিউট কেন্দ্রীক কোন অভিযোগ আসলে তারা তদন্ত করে। সেই কমিটি এই অভিযোগ নিয়ে কাজ করছে। কমিটি যখন রিপোর্ট দিবে সেটা দেখে আমি উপাচার্যের নিকট জমা দেব। তিনি যা সিদ্ধান্ত দেবেন তা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।